শিরোনাম:

একান্ত সাক্ষাৎকারে তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের সিইও আবুল কালাম আজাদ

বাংলাদেশে ইসলামী বীমার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্বল: আবুল কালাম আজাদ

নিজস্ব রিপোর্ট জানুয়ারী ১৮, ২০২৪


বাংলাদেশে ইসলামী বীমার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্বল, বলেছেন তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। ২০০১ সালের ১ আগষ্ট তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এবং কোম্পানী সেক্রেটারী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে বীমা শিল্পে তার পদযাত্রা শুরু হয়। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে ব্যবস্থাপনায় এমকম ডিগ্রি অর্জনের পরে তিনি অন্য পেশাতে কৰ্মজীবন শুরু করেন।

সম্প্রতি বীমা শিল্পের উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে ইনস্যুরেন্স নিউজ বাংলা'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ইসলামী বীমার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইন্স্যুরেন্স নিউজ বাংলা'র সম্পাদক এম এম রহমতুল্লাহ।

ইনস্যুরেন্স নিউজ বাংলা: বীমা শিল্পে কিভাবে সম্পৃক্ত হলেন?

আবুল কালাম আজাদ: ১৯৯৯ সালে আমি তখন ইনুকো লি: এ চাকুরী করতাম। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: এর সাবেক ইভিপি ও ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লি: এর উদ্যোক্তা জনাব তাজুল ইসলাম সাহেব আমাকে ইসলামী ইন্সুরেন্স বাংলাদেশ লি: এর কোম্পানি সেক্রেটারী হিসেবে নোয়োগ প্রদান করেন। এভাবেই বীমা শিল্পে আগমন। 

আইএনবিঃ বীমা শিল্পে বর্তমানে কী কী সমস্যা আছে বলে আপনি মনে করেন?

আবুল কালাম আজাদ: বীমা শিল্পে প্রধান সমস্যা হলো অসম ও অনৈতিক প্রতিযোগিতার কারনে আকাশচুম্বী কমিশন হার। তাছাড়াও দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত বীমা কর্মীর অভাব। বীমার প্রতি সাধারণ মানুষের নেতিবাচক মনোভাব, জনসচেতনতার অভাব তো রয়েছেই।

আইএনবিঃ বীমা শিল্প দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের অবদান রাখছে?

আবুল কালাম আজাদ: বীমা শিল্প দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। দেশের সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করছে। আমদানী-রপ্তানির ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা বিধান করছে। জীবন বীমার ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের প্রবণতার পাশাপাশি মৃত্যুজনিত কারনে পরিবারের দুঃসময়ে পাশে থাকছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব রাখলেও দেশের জিডিপিতে বীমার অবদান খুবই সামান্য। অন্যান্য দেশে জিডিপিতে বীমা খাত উল্লেখযোগ্য অবদান রাখলেও বাংলাদেশে জিডিপিতে অবদান ১% এরও কম।

আইএনবিঃ সেন্ট্রাল শরীয়াহ কাউন্সিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন আপনি। ইসলামী বীমার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের এত আগ্রহ কেন, বলবেন কি? 

আবুল কালাম আজাদ: বাংলাদেশের মানুষ ইসলামী অর্থনীতির প্রতি দুর্বল। ব্যক্তি জীবনে ইসলামী অনুশাসন পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে না চললেও অনুভূতি প্রখরভাবে ধারণ করে। অপরদিকে ইসলামী ব্যাংকের সফলতার কারণে ইসলামী অর্থনীতির দ্বিতীয় খাত হিসেবে ইসলামী বীমার প্রতি গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে এবং এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। 

আইএনবিঃ বর্তমান বীমা শিল্পের প্রসার সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই ।
আবুল কালাম আজাদ: বীমা শিল্পের প্রসার বলতে যদি কোম্পানীর সংখ্যাধিক্যতা বুঝায় তাহলে শিল্পের প্রসার হয়েছে, বলা যায়। আর যদি মানুষের সম্পত্তির বা গ্রাহকের বিষয়টি বুঝানো হয় তাহলে বলা যায় যে, বীমা শিল্পের প্রসার তেমনটি ঘটেনি। নন-লাইফ বীমার ক্ষেত্রে যেহেতু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেহেতু বাধ্যগতভাবে বীমা করতে হয়। ব্যাংকের বিনিয়োগ ছাড়া যারা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে বা করেছে তারা বীমায় আগ্রহী হয় না। সচেতনতা ও নেতিবাচকতার কারণে প্রসারতা তেমনটি হয়নি। জীবন বীমার ক্ষেত্রে শতকরা ১০ জন মানুষও বীমার আওতাভুক্ত হয়নি। তাছাড়াও জিডিপিতে বীমা শিল্পের অবদানই প্রমাণ করে বাংলাদেশে বীমা শিল্পের তেমন প্রসার ঘটেনি।

আইএনবিঃ দায়িত্ব নেয়ার পরে তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সে আপনি কি কি পরিবর্তন আনতে পেরেছেন?

আবুল কালাম আজাদ: তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুুরেন্স লিঃ-এ পরিবর্তন আনার তেমন প্রয়োজন হয়নি। যেহেতু এ কোম্পানীতে আমি দীর্ঘ ২২ বছর যাবত আছি সেহেতু বর্তমান নিয়ম-কানুনগুলোর সাথে আমার সম্পৃক্ততা ছিল। সচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার প্রতি লক্ষ্য রেখেই কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের সুন্দর টীম রয়েছে। পরিচালনা পরিষদের দক্ষ নির্দেশনায় Management Team আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে।


আইএনবিঃ বীমা শিল্পের একজন সিইও হিসেবে আপনার উল্লেখযোগ্য কাজ নিয়ে ইনস্যুরেন্স নিউজ বাংলার পাঠকদের যদি কিছু জানাতেন?

আবুল কালাম আজাদ: বীমা শিল্প বিরাজমান অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নেতিবাচক মনোভাব, জনসচেতনতা, অসম ও অনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে বীমা খাতের উন্নতি হয়নি। অথচ বীমা খাতই দেশের অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির উপর দাড়াতে সহায়তা করতে পারে। পাঠকদেরকে নিজে বীমা শিল্প সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের, নিজে সম্পৃক্ত হবার ও অন্যদেরকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।


আইএনবিঃ করোনা সংকট কাটতে না কাটতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু। সাধারণ বীমা শিল্পে এর প্রভাব কতটা পড়েছে?

আবুল কালাম আজাদ: করোনা মহামারী ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের চাইতেও বাংলাদেশে ডলার সংকটের কারণে সাধারণ বীমা সেক্টরে সংকট তৈরী হয়েছে। ডলারের উচ্চ মূল্য ও সংকট এবং ব্যাংকের বিনিয়োগ বন্ধের কারণে সাধারণ বীমা খাত সংকটে পতিত হয়েছে। সাধারণ বীমা ব্যবসা মূলত: আমদানী ও ব্যাংকের বিনিয়োগের সাথে সংশ্লিষ্ট। ব্যবসা কমে গেছে ব্যাপকহারে। এ ধারা চলতে থাকলে বীমা ব্যবসায় বিপর্যয় নেমে আসবে। 


আইএনবিঃ ২০২২-২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে কত টাকার দাবী পরিশোধ করেছেন? ২০২৩ সালে ব্যবসার টার্গেট কত নির্ধারণ করছেন?

আবুল কালাম আজাদ: ২০২২-২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে আমাদের বীমা দাবির পরিমাণ ২০.০০ কোটি টাকা, ২০২৪ সালে ২০২৩ সালের টার্গেট টাকাই বহাল রাখা হয়েছে। 


আইএনবিঃ ১ মার্চকে কেন জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করা হয়? এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আবুল কালাম আজাদ: বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১ মার্চ, ১৯৬২ সালে আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে যোগদানের মাধ্যমে বীমা পরিবার সাথে সম্পৃক্ত হন। দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিনটিকে বীমা দিবস ঘোষণা করা হয়। বীমা দিবসে সরকার যে বিষয়গুলোর অবতারণা করছে:
অনৈতিক ও অসম প্রতিযোগিতার কারণে এর সুফল বীমা শিল্প ঘরে তুলতে পারছে না। বীমা দিবস যেভাবে পালিত হচ্ছে তাতে বীমা কোম্পানিগুলোর গেট-টুগেদার হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। আপামর জনগণের সম্পৃক্ততা একেবারেই কম। এটাকে কিভাবে জনসম্পৃক্ত করা যায়, সবাইকে ভাবতে হবে। 


আইএনবিঃ আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনারা কী প্রস্তুতি নিয়েছেন?

আবুল কালাম আজাদ: আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভবপর নয়। জাতীয়ভাবে নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। ডলার সংকট, আমদানী নীতিমালা, যুগোপযোগী ট্যারিফ নির্ধারণ, বেসরকারি খাতে রি-ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ইত্যাদি কোন একক কোম্পানির কাজ নয়। বীমা শিল্পের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঐক্যমতের ভিত্তিতেই অনৈতিক ও অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে পারে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এককভাবে পরিকল্পনা নেয়া যায় না।


আইএনবিঃ বাংলাদেশে ইসলামী বীমার ভবিষ্যৎ কেমন বলে আপনি মনে করেন?

আবুল কালাম আজাদ: বাংলাদেশে ইসলামী বীমার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। এজন্য কনভেনশনাল কোম্পানিগুলোর প্রায় সবাই তাকাফুল প্রকল্প নামে কাজ করছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিগত ২২ বছরেও ইসলামী বীমার উপযোগী কোনো আইন করা হয়নি; যার কারণে বীমা কোম্পানিগুলো মূলত: ইসলামের নামে প্রতারণা করছে। ইসলামকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ নিচ্ছে, এটা বন্ধ হওয়া উচিত।

আইএনবিঃ আপনাকে ধন্যবাদ।

আবুল কালাম আজাদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।